লাঞ্চ থেকে ঘুরে এসে আবার অস্বস্তিতে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কা। তবে বিষাক্ত পেসে আবারও বাংলাদেশ ক্যাম্পে স্বস্তি ফেরালেন তাসকিন আহমেদ। তার পেস-ঝড়ের পর মেহেদী হাসান মিরাজের ছোবলে শ্রীলঙ্কাকে চেপে ধরেছে বাংলাদেশ।
প্রথম সেশনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে বড় জুটির ভিত গড়েছিলেন ওশাডা ফার্নান্ডো ও পাথুম নিসানকা। একটু একটু করে নিজের সঙ্গে দলের সংগ্রহ বাড়িয়ে নিচ্ছেন তারা। ভয় ছড়ানো এই জুটি ভেঙেছেন তাসকিন বোল্ড করে। ডানহাতি পেসারের চমৎকার ডেলিভারিতে খেই হারানো নিসানকা বুঝতেই পারেননি বল! ৮৪ বলে ৩০ রানে থামে তার ইনিংস।
এই ব্যাটসম্যানের বিদায়ের তিন বল আবার বাংলাদেশের উৎসব। এবারের উপলক্ষটি মিরাজের সৌজন্যে। অফস্পিনার ফেরান সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগানো ওশাডাকে। ৮১ রান করে তিনি ধরা পড়েন লিটন দাসের গ্লাভসে। ২২১ বলের ইনিংসটি ওশাডা সাজান ৮ বাউন্ডারিতে।
ফলে শ্রীলঙ্কা হারায় ষষ্ঠ উইকেট। চা বিরতির আগে স্বাগতিকদের স্কোর ছিল ১৪৬ ওভারে ৬ উইকেটে ৪২৫।
ক্যান্ডি টেস্টে নতুন মোড়
কী চমৎকারভাবেই না পাল্টে গেলো ক্যান্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা। প্রথম দিনে যেখানে পড়েছিল মাত্র ১ উইকেট, সেখানে দ্বিতীয় দিনের আধঘণ্টার মধ্যে পড়লো ৩ উইকেট! তাসকিন আহমেদের জোড়া আঘাতের পর তাইজুল ইসলামের ছোবলে নতুন মোড় ক্যান্ডি টেস্টে। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটা তাই বাংলাদেশের।
প্রথম সেশনে হওয়া ২৬ ওভারে মাত্র ৪৩ রান দিয়েছে বাংলাদেশ, পেয়েছে ৩ উইকেট। তাসকিন-তাইজুলদের বোলিংয়ের সামনে সুবিধা করতে পারছেন না শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগে স্বাগতিকদের স্কোর ছিল ১১৬ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৩৪। ওশাডা ফার্নান্ডো ৬৫ রানে ও পাথুম নিসানকা অপরাজিত ছিলেন ০ রানে।
চলছে তাসকিন-শো
দ্বিতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টায় ক্যান্ডির উইকেটের চরিত্র ছিল একরকম। পরের ঘণ্টাতেই পাল্টে গেলো! ব্যাটিং উইকেট রূপ নিলো বোলিং ‘সহায়ক’ উইকেটে। পিচের চরিত্র যাইহোক না, বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন তাসকিন আহমেদ। তিনি দ্রুত দুই ব্যাটসম্যানকে ফেরানোয় দ্বিতীয় টেস্টে নতুন মোড়।
ক্যান্ডিতে চলছে তাসকিন-শো। সেঞ্চুরিয়ান লাহিরু থিরিমানেকে ফেরানোর উৎসব তখনও শেষ হয়নি, এর মধ্যেই আবার আনন্দের উপলক্ষ এনে দিলেন অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে ফিরিয়ে। রিভিউ নিলে এই ম্যাথুজকে আগেই আউট করতে পারতেন তাসকিন। সেটা না হলেও সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক এই পেসারেরই শিকার।
তাসকিন দুই ওভার আগে থিরিমানেকে ক্যাচ বানিয়েছিলেন লিটন দাসের গ্লাভসে। ম্যাথুজকেও আউট করেছেন লিটনের সাহায্য নিয়ে। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বল আউট সুইং হয়ে ম্যাথুজের ব্যাট ছুঁয়ে গেলে ঝাঁপিয়ে গ্লাভসবন্দি করেন লিটন। ফলে ৫ রানে শেষ হয় ম্যাথুজের ইনিংস।
এখানেই শেষ নয় বাংলাদেশের উইকেট উৎসবের। খানিক পর তাসকিনের সঙ্গে যোগ দেন তাইজুল ইসলাম। দুর্দান্ত ঘূর্ণিতে বাঁহাতি স্পিনার ফেরত পাঠিয়েছেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে। আগের ম্যাচে দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস খেলা এই ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে আউট মাত্র ২ রানে। তাইজুলের বাঁক খেয়ে লাফিয়ে ওঠা বল ধনাঞ্জয়ায় ব্যাট ছুঁয়ে গেলে গ্লাভসে নিতে পারেননি লিটন। তার হাতে লেগে যাওয়া বল স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তও প্রথম চেষ্টায় তালুতে নিয়ে পারেননি। তবে দ্বিতীয় চেষ্টায় আর ভুল করেননি তিনি।
ফলে শ্রীলঙ্কা হারায় চতুর্থ উইকেট। ১১৫ ওভারে স্বাগতিকদের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৩৩৪।
লিটন হতাশ করেননি তাসকিনকে
দুই হাত পাখির মতো করে যেন উড়তে চাইলেন তাসকিন আহমেদ। আসলে ডানহাতি পেসারের উইকেট উদযাপনের ভঙ্গিই এমন। প্রথম দিনেই এমন দৃশ্য দেখা হয়ে যেত, যদি বল তালুবন্দি করতে পারতেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় দিনে শান্তর মতো ভুল করেননি লিটন দাস। লাহিরু থিরিমানের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল গ্লাভসে জমিয়ে তাসকিনের সঙ্গে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছেন বাংলাদেশকে।
অবশেষ দ্বিতীয় উইকেট এলো বাংলাদেশের। ক্যান্ডি টেস্টের হতাশাজনক প্রথম ঘণ্টার পর তাসকিনের হাত ধরে এলো সাফল্য। এই পেসার আউট করেছেন সেঞ্চুরিয়ান থিরিমানেকে। লেগ স্টাম্পের বল খেলতে গিয়ে উইকেটকিপার লিটনের গ্লাভসবন্দি হয়েছেন লঙ্কান ওপেনার। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে খেলে গেছেন ১৪০ রানের ঝলমলে ইনিংস। ২৯৮ বলের দীর্ঘ ইনিংসটি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাজান ১৫ বাউন্ডারিতে। তার বিদায়ে ভেঙেছে ওশাডা ফার্নান্ডোর সঙ্গে ১০৪ রানের জুটি।
ফলে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনেই উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ১০৬ ওভারে তাদের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৩১৭ রান।
ক্যান্ডির প্রথম টেস্টের ‘কার্বন কপি’ বললে এতটুকু ভুল হবে না। সেই ব্যাটসম্যানদের দাপট আর বোলারদের হাহাকার! একই ভেন্যু পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের উইকেটের চরিত্র পাল্টাবে বলে যে জোর গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, তা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে লাহিরু থিরিমানে-দিমুথ করুণারত্নের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে। তাদের শতকে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে ১ উইকেটে ২৯১ রান পায় শ্রীলঙ্কা।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার বড় সংগ্রহের ভিত গড়েন দুই সেঞ্চুরিয়ান করুণারত্নে ও থিরিমানে। লঙ্কান অধিনায়ক ১১৮ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরলেও ১৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন থিরিমানে। ওশাডা ফার্নান্ডোকে নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করেন তিনি। প্রথম দিনে শ্রীলঙ্কার হারানো একমাত্র উইকেটটি নিয়েছিলেন অভিষিক্ত শরিফুল ইসলাম।