মিয়ানমারের অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভে সর্বশেষ কয়েকদিনে নিহতদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনসহ আরও কিছু শহরে নিহতদের শেষকৃত্যে শত শত মানুষ অংশ নিয়ে শোক জানায়।
ইয়াঙ্গুনের একটি গোরস্তানে ৩১ জনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। সিমেটরিতে শোক জানাতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, গত রবিবার ইয়াঙ্গুনে নিহত মেডিকেল শিক্ষার্থী খান্ত নয়ারের শেষকৃত্যে শত শত মানুষ অংশ নেয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে নিহত ওই শিক্ষার্থীর মাকে বিলাপ করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, তাদেরকে এখনই আমাকে হত্যা করতে বল। তাদেরকে আমার ছেলের পরিবর্তে আমাকে হত্যা করতে বল, কারণ আমি আমার ছেলের মৃত্যু সহ্য করতে পারছি না। শোকাতুর জনতা ‘আমাদের বিপ্লব চলবেই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। নিহতদের কিছু পরিবার জানায়, নিরাপত্তা বাহিনী লাশ আটকে রেখেছিল তারপরও তারা শেষ কৃত্য করবে।
রবিবার নিহতদের অধিকাংশ শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত হ্লায়াইং থারইয়ায় নিহত হয়। এই এলাকায় চীনের বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে। এদিন বিক্ষোভকারীরা দুইটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নির্বিচারে গুলিতে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভে মিয়ানমারে মোট ১৪৯ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন কাস্টডিতে নিহত হয়েছে।
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসকে (এএপিপি) দেশটির এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক বলেন, ‘এটা ভয়ঙ্কর। আমি চোখের সামনে গুলি করে বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে দেখেছি। এমন নৃশংস দৃশ্য জীবনেও ভুলতে পারব না।’
ঘটনার পর মিয়ানমারে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। স্থানীয় গণমাধ্যম এমআরটিভি জানিয়েছে ইয়াঙ্গুনের কয়েকটি এলাকায় ‘মার্শাল ল’ জারি করা হয়েছে। সামরিক কমান্ডাররা জেলা এবং আদালতের প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলেও খবরে বলা হয়।
সেনাবাহিনী গত বছরের ৮ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে অভিযোগ করে অভ্যুত্থান করেছে। ওই নির্বাচনে সু চির রাজনৈতিক দল এনএলডি ব্যাপক ব্যবধানে জয় লাভ করে । সেনাবাহিনী নতুন করে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। মিয়ানমারের সাধারণ জনগণ সেনাবাহিনীর দাবি প্রত্যাখান করে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে।